বিরাট কোহলির ২০২৫ সালের আইপিএল চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গল্প: কিং কোহলির পরিশ্রমের সোনালি ফসল

২০২৫ সালের আইপিএল ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বিরাট কোহলির নাম। দীর্ঘ ১৭ বছরের আইপিএল যাত্রার পর অবশেষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (RCB)-কে প্রথমবার আইপিএল শিরোপা উপহার দিলেন কিং কোহলি। এটি শুধু একটি ট্রফি জয় নয়, বরং বিরাট কোহলির অদম্য লড়াই, অধ্যবসায় আর ক্রিকেটপ্রেমের বিজয়গাথা।

বিরাট কোহলির আইপিএল পরিসংখ্যান বলছে, তিনি এখন পর্যন্ত আইপিএলে ২৫০টির বেশি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৮২০০-এর বেশি রান করেছেন, যেখানে রয়েছে ৮টি শতক ও ৫০টির বেশি হাফ-সেঞ্চুরি। আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের মালিক কোহলি ২০২৫ সালের আসরেও ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। এই মৌসুমে তিনি ১৫ ম্যাচে করেছেন ৭৪৫ রান, যা ২০২৫ আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ। স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪৫-এর ওপরে, আর গড় ছিল প্রায় ৫৩। একাধিক ম্যাচে চেজের সময় তার হাফ-সেঞ্চুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার শান্ত ব্যাটিং দলের জয়ের ভিত গড়ে দেয়। বিশেষ করে কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনালে তার ইনিংস ছিল ম্যাচ নির্ধারণী।

২০২৫ সালের আইপিএলের ফাইনালে বিরাট কোহলির ব্যাটিংয়ের দৃঢ়তা আর অভিজ্ঞতা দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখে। ফাইনালে তিনি ৬৮ রানের এক ক্লাসিক ইনিংস খেলেন মাত্র ৪৫ বলে, যেখানে ছিল ৮টি চারের মার ও ২টি ছক্কা। রান তাড়া করার সময় চাপের মুহূর্তে তার বাউন্ডারি মেরে ম্যাচের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিল, কেন তাকে ‘‘চেজ মাস্টার’’ বলা হয়। শুধু ফাইনাল নয়, পুরো টুর্নামেন্টে তিনি পাওয়ার প্লে-তে স্মার্ট স্ট্রাইক রোটেশন আর মিডল ওভারে অ্যাঙ্করের ভূমিকা পালন করে দলের রানের চাকা সচল রেখেছেন। কোহলির ব্যাটিং ধৈর্য আর আক্রমণাত্মক মানসিকতার মিশেলই RCB-কে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নের মঞ্চে তুলতে সাহায্য করেছে।

বিরাট কোহলির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও সমানভাবে কিংবদন্তি-সুলভ। টেস্ট, ওডিআই ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৭৫টির বেশি শতক করা এই ব্যাটসম্যান বিশ্বের অন্যতম সফল ক্রিকেটার। তিনি দ্রুততম ৮০০০, ১০০০০ ও ১২০০০ ওডিআই রান করার রেকর্ডের মালিক। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ, ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু এই আইপিএল শিরোপা না পাওয়ার কারণে তাঁর ক্লাব ক্রিকেটের সাফল্যকে ঘিরে সবসময় এক ধরনের প্রশ্নচিহ্ন থেকে যেত। ২০২৫ সালের এই জয় সেই প্রশ্নের জবাব।

২০২৫ সালে বিরাট কোহলির নেতৃত্ব ও ব্যাটিং প্রমাণ করেছে কেন তিনি সত্যিই ‘‘কিং কোহলি’’। তার ক্রিকেটের প্রতি প্যাশন, ফিটনেসের প্রতি প্রতিশ্রুতি, এবং দলের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার মানসিকতা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। আইপিএল শিরোপা জয়ের পর কোহলি নিজেই বলেছেন, ‘‘এটা শুধু আমার নয়, কোটি কোটি RCB সমর্থকের স্বপ্নপূরণ। এত বছরের পরিশ্রমের সার্থকতা পেলাম।’’

এই আইপিএল ট্রফি বিরাট কোহলির ক্যারিয়ারের শেষ অপূর্ণতাকে ঘুচিয়ে দিল। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নশিপ শুধু RCB বা কোহলির নয়, বরং ক্রিকেট ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে, যেখানে লড়াই, বিশ্বাস ও পরিশ্রমের জয়গান লেখা হলো। কোহলির এই সাফল্য প্রমাণ করে দেয়, সাফল্য ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের কাছে মাথা নত করেই আসে। আজীবন সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হওয়া সেই অধিনায়ক বিরাট কোহলি ২০২৫ সালের আইপিএল শিরোপা জয়ের পর এক নতুন কিংবদন্তি রূপে প্রতিষ্ঠিত হলেন, যার গল্প যুগের পর যুগ ক্রিকেটপ্রেমীদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।