Header Ads Widget

Ticker

6/recent/ticker-posts

ক্রিকেট মাঠের বিভিন্ন অঞ্চল ও ফিল্ডিং পজিশনের নাম

ক্রিকেট মাঠের ফিল্ডিং এরিয়া

ক্রিকেট শুধু একটা খেলা নয়—এটা অনেকের জন্য রীতিমতো আবেগ, অনুভূতি আর ভালবাসার আরেক নাম! তবে অনেকেই ক্রিকেটের নিয়মকানুন সহজভাবে বুঝতে পারলেও ক্রিকেট মাঠের বিভিন্ন এরিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখেন না অথবা বোঝার আগ্রহ দেখান না। ক্রিকেট খেলা ভালভাবে উপভোগ করার জন্য মাঠের প্রতিটি জায়গার নির্দিষ্ট নাম ও এরিয়াগুলোর গুরুত্ব জানাটাও সমান জরুরি। অনেকেই জানেন না – "স্লিপ" কোথায়? "মিড-অফ" কি? "পিচ" আর "ক্রিজ" এর মধ্যে পার্থক্যই কী? এই লেখায় আমরা খুব সহজ ভাষায় এবং বিস্তারিতভাবে জানবো ক্রিকেট মাঠের বিভিন্ন এরিয়া ও তাদের কাজ সম্পর্কে।

১. পিচ (Pitch) – ক্রিকেটের যুদ্ধক্ষেত্র:

ক্রিকেট মাঠের মাঝখানে যে জায়গাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই পিচ। এটি ২২ গজ বা ২০.১২ মিটার লম্বা এবং প্রায় ১০ ফুট চওড়া। এই জায়গাতেই বোলার বল করেন আর ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করেন। উইকেট নেওয়া, রান করা, এলবিডব্লিউ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু এই পিচ।
 

২. ক্রিজ (Crease) – ব্যাটসম্যানের নিরাপত্তার সীমানা:

ক্রিজ হলো পিচের দুই পাশে আঁকা দাগ, যা ব্যাটসম্যান এবং বোলারের জন্য সীমারেখা নির্ধারণ করে।
  • পপার ক্রিজ (Popping crease): ব্যাটসম্যান এই লাইনের ভেতরে থাকলে রানআউট থেকে বাঁচে।
  • বোলিং ক্রিজ: বোলারকে বল করার সময় এর পেছনেই থাকতে হয়।
  • রিটার্ন ক্রিজ: বোলারের পাশ দিয়ে দৌড়ে আসার জায়গা।


৩. উইকেট ও স্টাম্প (Wicket & Stumps):

প্রতিটি প্রান্তে থাকে তিনটি স্টাম্প আর দুইটি বেল। এগুলোকেই সম্মিলিতভাবে উইকেট বলা হয়। যখন বল স্টাম্পে লেগে বেল পড়ে যায়, তখন ব্যাটসম্যান আউট হতে পারে।


৪. আউটফিল্ড (Outfield) – সবুজ গালিচা:

পিচের বাইরের ঘাসে মোড়া বিশাল অংশটিকে আউটফিল্ড বলা হয়।এখানে মূলত ফিল্ডাররা বল ধরতে থাকেন। এই জায়গার ঘাস বেশি হলে বল ধীরে যায়, আর শুকনা বা শক্ত হলে বল দ্রুত বাউন্ডারি পেরিয়ে যায়।


৫. ইনফিল্ড (Infield) – ফিল্ডিং কৌশলের মঞ্চ:

পিচ ঘিরে প্রায় ৩০ গজ বৃত্তাকার এলাকার নাম ইনফিল্ড।
এখানে ক্লোজ-ইন ফিল্ডাররা দাঁড়ান, যেমন: স্লিপ, গালি, পয়েন্ট ইত্যাদি। পাওয়ারপ্লের সময় এই ইনফিল্ডে নির্দিষ্ট সংখ্যক ফিল্ডার রাখা বাধ্যতামূলক।


৬. বাউন্ডারি (Boundary) – চার-ছয়ের শেষ গন্তব্য:

মাঠের একেবারে শেষ প্রান্ত ঘিরে থাকা দাগ বা দড়িকে বাউন্ডারি বলা হয়।
  • বল মাটিতে গড়িয়ে বাউন্ডারি ছুঁলে ৪ রান
  •  বল সরাসরি বাউন্ডারি পার হলে ৬ রান


৭. স্লিপ, গালি ও পয়েন্ট – ক্যাচ নেওয়ার আঁতুড়ঘর:

স্লিপ (Slip): উইকেটকিপারের পাশেই দাঁড়ানো ফিল্ডারদের এলাকা।
গালি (Gully): স্লিপ থেকে একটু কোনাকুনি জায়গা
পয়েন্ট (Point): ব্যাটসম্যানের ডান পাশে, স্কয়ার অঞ্চলে
এসব জায়গা ক্যাচ ধরার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ফাস্ট বোলারের সময় এসব পজিশন ভীষণ কার্যকর।


 ৮. কাভার, মিড-অফ, মিড-অন – বল ঠেকানোর ব্যারিকেড:

  •  কাভার (Cover): ব্যাটসম্যানের সামনের ডানপাশে কোনাকুনি
  •  মিড-অফ (Mid-off): সামনের ডান পাশে, মাঝামাঝি দূরত্বে
  •  মিড-অন (Mid-on): সামনের বাঁ দিকে, অফ সাইডের বিপরীত পাশে
এগুলো মূলত বল ঠেকানো ও দ্রুত রান আটকানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফিল্ডিং পজিশন।


৯. স্কয়ার লেগ, মিড উইকেট ও ফাইন লেগ – লেগ সাইডের নিয়ন্ত্রণকারী:

  •  স্কয়ার লেগ: ব্যাটসম্যানের পিছনের বাঁ পাশে স্কয়ার
  • মিড উইকেট: মাঝখানের দিকে একটু সামনে
  • ফাইন লেগ: একেবারে পেছনের দিকে, লেগ সাইডে
এগুলো ব্যাটসম্যানের পুল, হুক ও ফ্লিক শট কভার করার জন্য ব্যবহৃত হয়।


১০. বোলারের রান-আপ এলাকা:

পিচের পেছনে যে জায়গা দিয়ে বোলার দৌড়ে এসে বল করেন, সেটাই তার রান আপ এরিয়া। স্পিনারদের ছোট রান-আপ, কিন্তু ফাস্ট বোলারদের রান-আপ অনেক লম্বা হয়।


১১. থার্ড ম্যান ও ডিপ ফিল্ড – পেছনের নিরাপত্তা বলয়:

  • থার্ড ম্যান (Third Man): উইকেটকিপারের পেছনের দিকে, ডান পাশে
  • ডিপ ফাইন লেগ: লেগ সাইডের একদম সীমানায়
  • ডিপ কাভার, ডিপ মিড-উইকেট: বাউন্ডারির কাছাকাছি পজিশন
এসব জায়গা মূলত চার-ছয় আটকাতে বা লং শটের ক্যাচ ধরতে ব্যবহৃত হয়।

ক্রিকেট মাঠের প্রতিটি এরিয়া শুধু একটি নাম নয়; অঞ্চলগুলো খেলার কৌশল, পরিকল্পনা এবং ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে। আপনি যত বেশি জানবেন, তত বেশি ম্যাচ বুঝতে পারবেন, উপভোগ করতে পারবেন। পরবর্তী বার যখন খেলা দেখবেন, তখন চোখ রাখুন এই জায়গাগুলোর দিকে—আপনিও যেন হয়ে উঠতে পারেন এক জন “ক্রিকেট বিশারদ”!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ