বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অনেক প্রত্যাশিত, স্বস্তির জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৬ রানে পরাজিত করে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে টাইগাররা!
পঞ্চপাণ্ডব'খ্যাত তামিম, মুশফিক, সাকিবদের ছাড়া তারুণ্য নির্ভর ওয়ানডে দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স খুব একটা সুখকর যাচ্ছিল না! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় থেকে ওয়ানডে ম্যাচে শুধুই হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোনো ম্যাচ জিততে না পারা বাংলাদেশ আরব আমিরাতের সাথেও ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে! এরপর পাকিস্তান সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এবং শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে হারার পর দলকে উজ্জীবিত করতে এমন একটা জয়ই দরকার ছিল।
গতকাল টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। কলম্বোতে আগে ব্যাট করা দলের জয়ের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেনি অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। গত এক বছরে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়া পাঁচটি ম্যাচই জিতেছে আগে ব্যাটিং করা দল। আর সবগুলো ম্যাচই জিতেছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে আগের ম্যাচে ফিফটি পাওয়া তানজিদ তামিমকে হারালেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পারভেজ হোসেন ইমন এবং নাজমুল হোসেন শান্ত স্বচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করে রানের চাকা সচল রাখে। দলীয় ৭৩ ও ব্যক্তিগত ১৪ রানের মাথায় শান্ত আউট হলে ব্যাটিংয়ের মূল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তাওহীদ হৃদয়। ইমন ৯ চার আর ১ ছক্কায় ৬৯ বলে ৬৭ রান করে আউট হওয়ার পর অধিনায়ক মেহেদী মিরাজ হৃদয়কে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন। তাওহীদ হৃদয় নিজের উইকেট টিকিয়ে রেখে ধীরে সুস্থে খেলতে থাকেন। ৪০তম ওভারে ৬৯ বলে ৫১ রান করে হৃদয় যখন আউট হন তখন দলের রান ২১২। এর মাঝে শামীম হোসেন ২২ ও জাকের আলী ২৪ রান করে সাজঘরে ফিরে গেছেন। ইনিংসের শেষদিকে তানজিম সাকিবের ক্যামিও ইনিংসের কারণে বাংলাদেশ ২৪৮ রানের লড়াই করার মতো একটা টোটাল সংগ্রহ করে। সাকিব ২২ বলে ২ ছক্কা আর ২ চারের সাহায্যে মূল্যবান ৩৩ রান যোগ করলেও অপর প্রান্তে সবাই আউট হয়ে যাওয়ায় চার ওভার আগেই বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়ে যায়।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে শুরুতেই স্ট্রাইক করেন তানজিম সাকিব। ৫ রানেই পাথুম নিশাঙ্কাকে এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। তবে ওয়ান ডাউনে কুশল মেন্ডিসের ঝড়ো ইনিংসে ভালোভাবেই জবাব দিতে থাকে শ্রীলঙ্কা। মাত্র ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন কুশল। যা কিনা প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সবচেয়ে কম বলে ফিফটির রেকর্ড। ৯টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৩১ বলে ৫৬ রান করে তানভীর ইসলামের স্পিনে কুশল মেন্ডিস এলবিডব্লিউ হলে বাংলাদেশ দলে স্বস্তি ফিরে আসে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে শ্রীলঙ্কার উইকেট পড়তে থাকে। ৩৬তম ওভারে ১৫৬ রানে ৭ম উইকেট হিসেবে হাসারাঙ্গা আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য জয়টা শুধুই সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু খেলার আসল টুইস্ট তখনও বাকি ছিল।
নবম উইকেট জুটিতে শ্রীলঙ্কার জেনিথ লিয়ানাগে দুষ্মন্ত চামিরাকে সঙ্গে নিয়ে যোগ করেন ৫৮ রান। ম্যাচ যত এগোতে থাকে লিয়ানাগে ততই আগ্রাসী হয়ে উঠতে থাকেন। একটা সময় রান আর বলের ব্যবধান প্রায় সমান হয়ে যায়। ৪৬তম ওভারে মুস্তাফিজ মাত্র এক রান দিলে শ্রীলঙ্কার উপর চাপ সৃষ্টি হয়। এর এক ওভার পরেই মুস্তাফিজের এক স্লোয়ারে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৭৮ রান করে জয় থেকে দলকে মাত্র ২১ রান দূরে রেখে সাজঘরে ফিরে যান। এরপর তানজিম তামিম শেষ উইকেট হিসেবে চামিরাকে বোল্ড আউট করলে বাংলাদেশ ১৬ রানের মূল্যবান জয়ের দেখা পায়। দলের পক্ষে অফ স্পিনার তানভীর ইসলাম ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার ইনিংস ধসিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এই জয়ের ফলে বাংলাদেশের র্যাঙ্কিংয়ের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ৭৮ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে আইসিসির বর্তমান র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম, পেছনে ফেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। বেশ কিছুদিন ধারাবাহিকভাবে হারতে থাকায় বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং ১০ নম্বরে চলে গিয়েছিল। ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে চাইলে র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে আরও উন্নতি করতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ