টেস্ট ক্রিকেট মানেই ধৈর্যের পরীক্ষা। এখানে দ্রুত রান নয়, বরং দীর্ঘ সময় টিকে থেকে রান করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে যারা ৩০০ বা তার বেশি রান করেন, তারা হয়ে যান ক্রিকেট ইতিহাসের একেকজন জীবন্ত কিংবদন্তি। প্রায় ১৫০ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৪ জন ব্যাটার এই অনন্য অর্জনে নাম লিখিয়েছেন। এই অর্জন সংখ্যায় কম, কিন্তু ক্রিকেটে এর মর্যাদা অসীম।
কোন দেশের ব্যাটাররা কতবার তিনশ ছুঁয়েছেন?
সবচেয়ে বেশি ৩০০ রানের ইনিংস এসেছে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের ব্যাট থেকে—মোট ৮ বার। এরপর ইংল্যান্ড ৭ বার, ভারত ৬ বার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ বার, পাকিস্তান ৪ বার, শ্রীলঙ্কা ৩ বার এবং নিউজিল্যান্ড ১ বার। এখনো তিনশর স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের কোনো ব্যাটার।যেসব ব্যাটার একাধিকবার ৩০০ করেছেন:
- ব্রায়ান লারা এই তালিকায় সবচেয়ে উজ্জ্বল। তিনি দুইবার ৩০০পেরিয়েছেন—প্রথমে ৩৭৫ রান, পরে অবিশ্বাস্য ৪০০*।
- ডন ব্র্যাডম্যান করেছেন ৩৩৪ ও ৩০৪ রান।
- ভারতের ভিরেন্দর শেহবাগ একবার ৩০৯ রান করলেও আরেকবার ২৯৩ করে খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন দ্বিতীয়বারের জন্য।
টেস্ট ইতিহাসের সেরা ৩০০+ রানঃ
সবার ওপরে আছেন ব্রায়ান লারা—২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০০* রান করে তিনি ভেঙেছিলেন নিজেরই আগের রেকর্ড (৩৭৫)। হেইডেন করেছিলেন ৩৩৪, গেইল ৩৩৩, শেহবাগ ৩০৯, ইনজামাম ৩২৯, এবং লেন হাটন করেছিলেন ৩৬৪ রান। এরা প্রত্যেকেই নিজেদের সময়ের ভয়ংকর ব্যাটসম্যান ছিলেন।বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ইনিংস: ৩০০-র কাছাকাছি:
বাংলাদেশ এখনও ৩০০ ছুঁতে পারেনি, তবে ইতিহাস গড়া কিছু অসাধারণ ইনিংস আছে যেগুলো তিনশর ঘরে না গেলেও ক্রিকেট ইতিহাসে গর্বের জায়গায় রয়েছে।
মুশফিকুর রহিম: বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৮ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন ২১৯* রান। ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন ঠিক ২০০ রান—বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।
সাকিব আল হাসান: ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৭ রান করেছিলেন—বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর।
তামিম ইকবাল: ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ২০৬ রানের ঝড়ো ইনিংস।
মুমিনুল হক: ক্যারিয়ারে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৫ রান এবং ২০২০ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি করেছিলেন ২০২ রান।
এই চারজন—মুশফিক, সাকিব, তামিম ও মুমিনুল—বাংলাদেশের ব্যাটিং ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলোর রচয়িতা। তাদের ইনিংসগুলোই ‘তিনশত ক্লাব’-এর সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছানোর নিদর্শন।
মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হক—দুজনই বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।
কিছু চমকপ্রদ তথ্য:
- প্রথম তিনশ রান এসেছিল ১৯৩০ সালে—অ্যান্ডি স্যান্ডহাম (৩২৫ রান)
- শেহবাগের ৩০৯ ছিল সবচেয়ে দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরি (২৭৮ বলে)
- লারার ৪০০* এখন পর্যন্ত একমাত্র চারশ প্লাস ইনিংস
টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ রান শুধুই একটি সংখ্যা নয়—এটি একজন ব্যাটসম্যানের দক্ষতা, ধৈর্য ও মানসিক দৃঢ়তার প্রতীক। যারা এই মাইলফলকে পৌঁছেছেন, তাঁরা সত্যিই কিংবদন্তি। আমরা বাংলাদেশি ভক্তরা স্বপ্ন দেখি, একদিন আমাদের দেশ থেকেও কেউ এই বিরল তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে যাবেন।বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেভাবে এগোচ্ছে, আশা করা যায়—অতিদূর ভবিষ্যতে আমরা একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকেও এই তালিকায় দেখতে পাবো।
0 মন্তব্যসমূহ