
রংপুর রাইডার্সের দেয়া ১৮৬ রানের বড় লক্ষ্য সহজে তাড়া করে বিপিএলের ফাইনাল নিশ্চিত করছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। গতকাল প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে সাকিবের রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা। এই নিয়ে পঞ্চমবারের মত বিপিএলের ফাইনালে পৌঁছাতে সক্ষম হলো দলটি। কখনো ফাইনালে না হারা কুমিল্লা গত দুই আসর সহ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০১৫ ও ২০১৯ সালে।
কাল দর্শকপূর্ন স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিধ্যান্ত নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে রংপুর। দলীয় ১০ রানে কোন রান না করে আউট হন শামীম হোসেন। এরপর রনি তালুকদার ১৩ এবং সাকিব আল হাসান ৫ রানে যখন আউট হন দলের রান তখর ৪.৪ ওভারে ২৭।
এরপরই ম্যাজিক ইনিংস খেলতে ক্রিজে আসেন নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার জেমস নিশাম। উইকেটের এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন বাহারি শট। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মেহেদী হাসানকে সাথে নিয়ে যোগ করেন ৩৯ রান। মেহেদী হাসান আউট হলে নিকোলাস পুরানের সাথে ৩৮ এবং নুরুল হাসানের সাথে ৫৩ রানের জুটি বেঁধে দলকে একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান তিনি। ইনিংসের শেষ দিকে আরো বিধ্বংসী হয়ে উঠেন নিশান। মুসফিক হাসানের করা ইনিংসের শেষ ওভারে একাই তোলেন ২৬ রান। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা নিশান অপরাজিত থাকেন ৯৭ রানে, খেলেন মাত্র ৪৯ বল। ৭ ছয় ও ৮ চারে সাজানো গতকালের ইনিংসটিই তার টি২০ ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস। নিশানের পাশাপাশি নুরুল হাসানের ৩০ এবং মেহেদী হাসানের ২২ রান দলকে ১৮৫ রানের বড় সংগ্রহ গড়তে সাহায্য করে।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় কুমিল্লা। ইনিংসের প্রথম বলে কোন রান না করেই আউট হন সুনীল নারাইন। কিন্তু শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে দেখেশুনে ব্যাট চালাতে থাকেন এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তৌহিদ হৃদয় এবং দলের ক্যাপ্টেন আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন দাস। তাদের দুজনের ৮৯ বলের ১৪৩ রানের রেকর্ড জুটিই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। ৪ ছয় ও ৫ চারে ৪৩ বলে ৬৪ রান করে হৃদয় যখন আউট হন দল তখন জয় থেকে ৪৩ রান দূরে। তৌহিদের আউটের পর লিটন দাস দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিং করে দলকে জয়ের আরো কাছাকাছি পৌঁছে দেন। দলীয় ১৭৩ রানে আউট হওয়ার পূর্বে ৪ ছয় ও ৯ চারে ৫৭ বলে ৮৩ রান করেন লিটন। বাকি কাজটুকু মঈন আলি আন্দ্রে রাসেল মিলে শেষ করেন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে লিটন দাস তৌহিদ হৃদয়ের সাথে তার পার্টনারশীপকে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পার্টনারশীপ হিসেবে উল্লেখ করেন।
কাল কুমিল্লা ও রংপুর ম্যাচে অনেকদিন পর বিপিএলে প্রাণ ফিরে এসেছে। স্টেডিয়ামে ছিল উপচে পড়া দর্শকের ভিড়। প্রায় ২৭ হাজার মানুষ মাঠে বসে খেলা উপভোগ করেছে। কালকের ম্যাচ জয়ের ফলে কুমিল্লা সরাসরি চলে গেলো ফাইনালে। সাকিবের রংপুর ম্যাচ হারলেও এখনো সুযোগ আছে ফাইনালে যাওয়ার। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে এলিমিনেটর ম্যাচ বিজয়ী দলের সাথে জিতলে তারাও খেলতে পারবে ফাইনাল।
গতকাল দুপুরে দিনের অপর ম্যাচে তামিমের ফরচুন বরিশাল ৭ উইকেটে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেন্জার্সকে। এলিমিনেটের এই ম্যাচে পয়েন্ট টেবিলের তিন এবং চার নাম্বার দল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ নিশ্চিত করতে মুখোমুখি হয়েছিল।
টসে জিতে চ্ট্টগ্রামকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বরিশাল। ব্যাটিংয়ে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে চট্টগ্রামের।কোন ব্যাটসম্যানই ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। দলের পক্ষে জশ ব্রাউন সর্বোচ্চ ৩০ রান করেন। এছাড়া শুভাগত হোমের ২৪ এবং টম ব্রুসের ১৭ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ করতে সক্ষম হয় চট্টগ্রাম। বরিশালের পক্ষে কাইলস মায়ার, সাইফুদ্দিন ও ওবেড ম্যাকয় ২টি করে উইকেট সংগ্রহ করেন।
ছোট টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই দলীয় ২ রানে সৌম্য সরকারের উইকেট হারায় বরিশাল। কিন্তু আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবালের দায়িত্বশীল ব্যাটিং ও কাইলস মায়ারের বিধ্বংসী ইনিংসে এই রান তাড়া করতে আর কোন সমস্যা হয়নি। মায়ার ৫ ছয় আর ৩ চারে ২৬ বলে ৫০ করে আউট হন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৯ চারে ৪৩ বলে ৫২ রান করে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন।
এই ম্যাচ পরাজয়ের ফলে চট্টগ্রাম টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলো। আর বরিশালের সুযোগ থাকলো ২৮শে ফেব্রুরারি দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলে ফাইনালে যাওয়ার।
0 মন্তব্যসমূহ