বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজের এর প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন টাইগার ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্ত; তাকে যোগ্য সমর্থন দিয়েছেন অভিজ্ঞ মুসফিকুর রহমান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
গতকালের ম্যাচটি ছিল টাইগারদের জন্য বছরের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট হলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না টাইগারদের। গত বছর মার্চে আয়ারল্যান্ডের সাথে সিরিজ জয়ের পর জেতা হয়নি আর কোন সিরিজ; ঘরের মাঠে হারতে হয়েছে আফগানিস্তানের সাথেও। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর এশিয়া কাপের ব্যর্থতা তো ছিলই! উপরন্তু শ্রীলঙ্কার সাথে সদ্য সমাপ্ত টি২০ সিরিজে হেরে যাওয়া বাংলাদেশের সামনে কাল ম্যাচ জয়ের কোন বিকল্প ছিল না।
কাল টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার ওপেনিং জুটি বড় সংগ্রহের পথেই হাঁটছিলেন। আভিশকা ফার্নান্দো আর পাথুম নিশাঙ্কা মিলে ১০ ওভারে তুলে ফেলেন ৭১ রান। স্কোরবোর্ড যখন ৩০০ রানের ইঙ্গিত দিচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে ত্রাণকর্তার ভুমিকায় আবির্ভাব হন বোলিং সেনসেশন তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের প্রথম ব্রেকথ্রু সহ পর পর তিন ওভারে ফিরিয়ে দেন শ্রীলঙ্কার তিনজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। সাকিবের আঘাতে ছন্দ হারানো শ্রীলঙ্কার রানকে সচল রাখার দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নেন অধিনায়ক কুলশ মেন্ডিজ আর জানিথ লিয়াঙ্গি। লিয়াঙ্গি ইনিংসের সর্বোচ্চ ৬৭ ও মেন্ডিজ ৫৯ রান করে দলের বিপর্যয় থামালেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন হাসারাঙ্গা, আসালাঙ্কা ও সামারিউইকরামা। শ্রীলঙ্কাকে অল্প রানে আটকানোর কৃতিত্ব দিতে হবে তাসকিন ও শরিফুলকেও। শুরুতে অনিয়ন্ত্রিত খরুচে বোলিং করলেও পরের স্পেলগুলোতে ভালোভাবে ফিরে আসেন তারা দুজন। তাসকিন মিডল অর্ডারের ৩ উইকেট এবং শরিফুর লোয়ার অর্ডারের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাকফুটে যেতে বাধ্য করেন। ২৫৬ রানেই শেষ হয় শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
ব্যাট করতে নেমে ২৫৬ রানের সহজ লক্ষ্যটাই কঠিন বানিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের প্রথম বলে মাদুশাঙ্কার বলে বোল্ড হয়েছেন লিটন দাস। বড় শট খেলতে গিয়ে শটে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্য সরকার। তৌহিদ হৃদয়কেও ক্লিন বোল্ড করে দেন মাদুশান। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে আরেকটা পরাজয় যখন চোখ রাঙাচ্ছিল তখন ক্রিজে এসে পজিটিভ ক্রিকেট খেলতে থাকেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে শান্তর সাথে ৬৯ রানের কার্যকরী জুটি গড়ে দলের প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন। অপরদিকে টাইগার ক্যাপ্টেন ঠান্ডা মাথায় দেখে শুনে খেলে ইনিংস বড় করতে থাকেন। মাহমুদুল্লাহ ৩৭ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে আউট হওয়ার পর দলের হাল ধরেন মিঃ ডিপেন্ডেবল অভিজ্ঞ মুসফিকুর রহিম। জয়ের বন্দরে পৌঁছতে শান্তকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন বাকিটা পথ, খেলেছেন সেন্সিবল ক্রিকেট, নেননি কোন বাড়তি ঝুঁকি। পঞ্চম উইকেটে শান্ত ও মুসফিকের ১৬৫ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে ৩২ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটের বড় জয় পায় বাংলাদেশ। নাজমুলের সেঞ্চুরির সাথে ৮৪ বলে ৮ চারের সাহায্যে ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুসফিক।
নাজমুল হোসেন শান্তর কালকের ইনিংসটাকে অবশ্যই আলাদা কৃতিত্ব দিতে হবে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় এবং অধিনায়ক হিসেবে প্রথম শতক তুলে নেয়ার দিনে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে খাদের কিনারা থেকে দলকে রক্ষা করেছেন। ১৩ চার আর ২ ছক্কায় ১২৯ বলের ১২২ রানের ইনিংসটিই তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ। এর আগে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল আয়ারল্যান্ডের সাথে ১১৭ রানের। কাল শতক করার পরও ইনিংস বড় করার চেষ্টা করেছেন, দেখিয়েছেন অধিনায়ক সুলভ টেম্পারমেন্ট। কোন বিলাশী শট না খেলে শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। শ্রীলঙ্কার সাথে শেষ তিনবারের দেখায়ই হেসেছে তার ব্যাট। কালকের ম্যাচের আগের দুই ম্যাচেও পেয়েছেন ফিফটির দেখা।
প্রিয় প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার সাথে কালকের ম্যাচে বোলিং-ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে পরেও কামব্যাক করতে পেরেছে টাইগাররা; যা আগামী ম্যাচগুলোতে নিশ্চিতভাবে দলকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। ব্যাটিয়ে শান্ত, মুসফিক, মাহমুদুল্লাহর সাথে বোলিংয়ে নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়েছেন সাকিব, শরিফুল, তাসকিনরা। সিরিজের আগে পুরো দলের একটা ইউনিট হয়ে খেলার যে প্রতিশ্রুতি অধিনায়ক শান্ত দিয়েছিলেন প্রথম ম্যাচে তারই প্রতিফলন ঘটালো টাইগাররা।
0 মন্তব্যসমূহ