বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টি২০ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ২৮ রানে পরাজিত করে সিরিজ জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে কুশল মেন্ডিজ ও নুয়ান থুশারার কাছে। এর আগে বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কার সাথে টি২০ সিরিজ জিতে নি। গতকাল সুযোগ ছিল নতুন ইতিহাস তৈরি করার। কিন্তু টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতায় সেই স্বপ্ন পুরন হলো না এবারও।
বাংলাদেশ সিরিজ হারলেও পুরো সিরিজে টস ভাগ্য সহায়ক ছিল শতভাগ। প্রথম দুই ম্যাচের মত শেষ ম্যাচেও টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিধ্যান্ত নেয় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে নিয়মিত উইকেট পরলেও রানের চাকা সচল রাখেন কুশল মেন্ডিজ। ইনিংসের ১৭ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করে ৫৫ বলে ৮৬ রান করে দলকে একটা বড় পুঁজি গড়ে দিয়ে যান। মেরেছেন ৬টি ছক্কা ও ৬টি চার। শ্রীলঙ্কার আর কোন ব্যাটসম্যানই ইনিংস বড় করতে পারেনি। অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কামিন্দু মেন্ডিজ ১২, হাসারাঙ্গা ১৫, ম্যাথিউস ১০ ও শানাকার ১৯ রানের সুবাদে ১৭৪ রানের বড় স্কোর গড়তে সক্ষম হয় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজ সবচেয়ে খরুচে বোলার। ৪ ওভার বল করে দিয়েছেন ৪৭ রান। শরিফুল, তাসকিন ভাল বোলিং করে স্কোরকে আরও বড় হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। রিশাদ ও তাসকিন দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
সিলেটে ১৭৫ রানের টার্গেট চেজ করা তেমন কঠিন না! দলের বর্তমান ফর্ম ও গত দুই ম্যাচের পারফরমেন্স বিবেচনায় সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখা বাড়াবাড়ি কিছু ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছিল থুশারা ঝড়! সেই ঝড়ে ওলট-পালট হয়ে যায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার। কিছু বুঝে উঠার আগেই ৩২ রানে ৬ উইকেট শেষ। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে হ্যাট্রিক সহ নুয়ান থুশারা তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশের ৫ জন ব্যাটারকে। হ্যাট্রিকের শিকার হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয় ও মাহমুদুল্লাহ। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন সৌম্য সরকার ও শরিফুর ইসলামের উইকেট। টপ অর্ডার মিডল অর্ডার ভেঙ্গে পড়ার পরও দল যে ১৪৬ রান করতে পেরেছে তার কৃতিত্ব বোলারদের। রিশাদ হোসেনের ৫৩, তাসকিনের ৩১ ও মেহেদী হাসানের ১৯ রান শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে কিন্তু ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। তবে তাদের মন জুড়ানো ব্যাটিং দেখে ব্যাটসম্যানদের আফসোস বেড়েছে নিশ্চিত! রিশাদ ৩০ বলে ৭ ছক্কার সাহায্যে করেছেন ৫৩ রান। টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশিদের মধ্যে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এখন তার। মাত্র দুই ম্যাচ আগে জাকের আলির ৬ ছক্কার রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিয়েছেন। তাসকিন আহমেদ ২১ বলে ৩১ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৩টি চার ও ২টি ছক্কা। শেষদিকে মুস্তাফিজও ছক্কা মেরেছেন। কিন্তু যে ক্ষতি নুয়ান থুশারা করে গেছেন তা আর কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয় নি! ফলাফল বাংলাদেশের ২৮ রানে ম্যাচ হার, সেইসাথে সিরিজ হার!
কাল শ্রীলঙ্কা দলের ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনের সময় আবারও টাইমড আউট ঘটনার রেশ চলে এসেছে! শ্রীলঙ্কা দলের প্লেয়াররা হাতে ঘড়ি দেখিয়ে টাইমড আউট ভঙ্গি করে ছবিতে পোজ দিয়েছে যেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনেও। হতে পারে এটা চলতি সিরিজে ম্যাথিউসকে উদ্দেশ্য করে শরিফুলের টাইমড আউট ভঙ্গির জবাব! বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্ত বিষয়টা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, টাইমড আউট পেছনের ঘটনা, আমরা নিয়মের বাইরে কিছু করি নি। শ্রীলঙ্কা দলের পেছনের ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসা উচিং। আর এটা নিয়ে আমরা চিন্তিতও না। পক্ষান্তরে টাইমড আউট উদ্যাপন নিয়ে মেন্ডিজকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সিরিজ জিতে আমরা খুশি, তাই এরকম করেছি!
ইদানীং সমশক্তির দল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার প্রায় প্রতিটা ম্যাচে পাওয়া যাচ্ছে চির প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ! শুরুটা হয়েছিল ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফিতে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিধ্যান্তকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়া, তুমুল তর্ক-বিতর্ক, নাগিন ড্যান্স সর্বোপরি মাহমুদুল্লার ম্যাজিক্যাল ইনিংসের কারণে ম্যাচ হারা ও ফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়ার ঘটনাগুলো শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড় ও দর্শক সমর্থকদের হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছিলো সেদিন! এরপর ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিবের আবেদনে ম্যাথিউসের টাইমড আউটের ঘটনার প্রভাব আরো ভয়াবহ। ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার টাইমড আউটের স্বীকার এঞ্জেলো ম্যাথিউস সহ প্রতিটা শ্রীলঙ্কান ফ্যানের জন্যই যেটা মেনে নেয়া ছিল কষ্টকর। সেই ম্যাচটা হেরেই শ্রীলঙ্কার ২০২৬ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। অপরদিকে ঐ ম্যাচ থেকে পাওয়া দুই পয়েন্টের জোরেই অষ্টম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ তৈরি করে নেয় বাংলাদেশ।
সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টি-২০ সিরিজেও বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে তর্ক-বিতর্কের উত্তাপ দেখা গেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে সৌম্যকে কট বিহাইন্ডের আবেদনে ফিল্ড আম্পায়ারের আউট দেয়া; আবার থার্ড আম্পায়ারের রিপ্লে দেখে সেটাকে নট আউট দেয়ার সিধ্যান্ত মেনে নিতে পারে নি শ্রীলঙ্কান খেলোয়াররা। মাঠে আম্পায়ারের সাথে তর্ক-বিতর্ক চলে অনেকক্ষণ। ম্যাচ রেফারির কাছে যাওয়ার সিধ্যান্তও নেয় শ্রীলঙ্কা। শেষ ম্যাচেও তৌহিদ হৃদয় আউট হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার প্লেয়ারদের সাথে তার গন্ডগোল বেধে যায়। সর্বশেষ টাইমড আউট সেলিব্রেশন প্রমাণ করে দুই দলের মধ্যে চলমান স্নায়ু যুদ্ধ হয়তো চলতে থাকবে বেশ কিছুদিন!
0 মন্তব্যসমূহ