Header Ads Widget

Ticker

6/recent/ticker-posts

জাতীয় দলে নতুন হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানের সন্ধান পেলো বাংলাদেশ!

Rishad Hossain

রিশাদ হোসেন তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ১৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রান করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ে বড় অবদান রাখার পাশাপাশি টি২০ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেও চমক দেখিয়েছেন, খেলেছেন ৩০ বলে ৫৩ রানের ঝলমলে ইনিংস।

শ্রীলঙ্কার সাথে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে বোলারদের দাপুটে পারফরমেন্সে ২৩৫ রানের কম পুঁজিতে  শ্রীলঙ্কাকে আটকাতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের কনকাশন বদলি হিসেবে তানজিদ তামিমের ব্যাটে ভালোভাবেই জয়ের পথে এগুচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু খেলার শেষ দিকে এসে আবার পরাজয়ের শঙ্কাও তৈরি হচ্ছিল। কারণ নিয়মিত উইকেট পড়ায় খেলার একটা সময় বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ১৭৮। ম্যাচ জয়ের জন্য তখনো ৫৮ রান প্রয়োজন। অতীতে এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক ম্যাচ হারার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। ঠিক এই পরিস্থিতিতে ক্রিজে এলেন রিশাদ হোসেন, খেললেন এবং জয় করলেন। সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ১৮ বলে ৪৮ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে ম্যাচ জয়ের সাথে সাথে নিশ্চিত করলেন সিরিজ জয়ও।

অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিশাদের ব্যাটিং দেখে হাসছিলেন ৩৭ রানে অপরাজিত থাকা মুসফিকুর রহিম। সবচেয়ে অসহায় লাগছিলো ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে! তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এর আগে কোন ব্যাটসম্যানই যে এমন ভাবে তার উপর চড়াও হয়নি! হাসারাঙ্গার ১১ বলে রিশাদের সংগ্রহ ৪০ রান; মেরেছেন ৪টি ছক্কা ও ৪টি চার। হাসারাঙ্গার এক ওভারে সর্বোচ্চ ২৪ রান নেয়ার রেকর্ড এখন রিশাদের দখলে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম, সেইসাথে দ্রুততম অর্ধশতকটিও হয়ে যেতে পারতো রিশাদের। বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে ২১ বলে দ্রুততম ফিফটির মালিক মোঃ আশরাফুল ও আব্দুর রাজ্জাক। শেষদিকে দলের জয়ের জন্য ৩ রান আর রিশাদের হাফ সেঞ্চুরির জন্য ২ রান প্রয়োজন এমন পরিস্থিতিতে মুসফিকের ব্যাট থেকে বাউন্ডারির মাধ্যমে জয়সূচক রানটি আসায় হাফ সেঞ্চুরিটি হাতছাড়া হয়ে যায় তার।

রিশাদের এই ইনিংসটি যে ফ্লুক না তার প্রমাণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ টি২০ ম্যাচে ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। সেদিন শ্রীলঙ্কার ১৭৪ রানের জবাবে টপ অর্ডারের সবাই যখন ব্যর্থ তখন প্রায় একাই দলকে জয়ের একটা সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। সেই ইনিংসে ৭টি ছক্কা মেরে বাংলাদেশি প্লেয়ারদের মধ্যে টি২০ ক্রিকেটে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন। মাত্র দুই ম্যাচ আগে করা জাকের আলির ৬ ছক্কার রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিয়েছেন অল্প সময়ের ব্যবধানে।

শ্রীলঙ্কা সিরিজে ব্যাটিং দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের লাইম লাইটে চলে আসা রিশাদ হোসেনের মূল পরিচয় কিন্তু একজন লেগ স্পিনার। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর প্রোফাইলে তার পরিচয় একজন লেগব্রেক গুগলি বোলার! রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করা ২১ বছর বয়সী বোলিং অলরাউন্ডার ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ ক্রিকেটে এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হলেও বলার মত সাফল্য ছিল না এতদিন।  মাত্র ৬টি লিস্ট-এ এবং ২৭টি টি২০ ম্যাচ খেলা রিশাদ হোসেন অনিয়মিত ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট ও বিপিএলে। লেগ স্পিনারদের প্রতি স্থানীয় দলগুলোর অবহেলা হতে পারে এর কারণ! তবে এ দল, হাই পারফরমেন্স টিম এবং বয়সভিত্তিক দলের সঙ্গে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করার পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের নেট প্র্যাকটিসে তিনি ছিলেন নিয়মিত বোলার। জাতীয় দলে লেগস্পিনারের অভাব থাকায় ব্যাটসম্যানদের প্র্যাকটিসের জন্য তাকে দিয়ে বল করানো হতো নিয়মিত।

বাংলাদেশে পাওয়ার হিটার নেই এই অভিযোগ বহু পুরোনো। আশরাফুল, আফতাব আহমেদের পর অনেকেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে দলে এসেছেন কিন্তু পারফর্ম করে দলে স্থায়ী হতে পারেনি। বর্তমান টি২০ যুগে এমনকি ওয়ানডে ক্রিকেটেও ৬/৭ নম্বরে পাওয়ার হিটার ব্যাটসম্যান ছাড়া বড় দলগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কঠিন। রিশাদ হোসেনকে পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়ে প্রস্তুত করা গেলে একসাথে লোয়ার মিডল অর্ডারে একজন হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান ও লেগ স্পিনারের অভাব থেকে মুক্তি পেতে পারে বাংলাদেশ। রিশাদের এ্যপ্রোচেও রয়েছে আত্মবিশ্বাসের ছাপ।  নিয়মিত সুযোগ পেলে পারফর্ম করে দলের জয়ে নিয়মিত ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ