Header Ads Widget

Ticker

6/recent/ticker-posts

বাংলাদেশের প্রমীলা ক্রিকেট; সাফল্য-ব্যার্থতার গল্প!

 

প্রমিলা ক্রিকেট

বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট ইতিহাস পুরুষ দলের মত এত লম্বা না হলেও বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্যের সাথে অংশগ্রহণ তরে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রমীলা ক্রিকেটাররা টাইগ্রেস বা বাঘিনী নামে পরিচিত! পুরুষ ক্রিকেটের মত নারী ক্রিকেটের অভিভাবক বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ২০০৭ সালে থাইল্যান্ডের সাথে দুই ম্যাচের সিরিজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পথচলা শুরু করে জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। দুটি ম্যাচেই জয়লাভ করে টাইগ্রেসরা। এর পর থেকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব, এসিসি টুর্নামেন্ট, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আসরে নিয়মিত ক্রিকেট খেলে আসছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

২০১১ সালে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোর মাধ্যমে টুর্নামেন্টের সেরা ছয় দলের মধ্যে অবস্থান করে নেয় মহিলা ক্রিকেট দল। সেই সময় বৈশ্বিক  র‍্যাঙ্কিংয়ে দশের মধ্যে প্রবেশ করায় নারী দলকে আইসিসি থেকে ওয়ানডে স্ট্যাটাসের মর্যাদা দেয়া হয়। নারী দল তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচটি খেলে ২০১১ সালের ২৬শে নভেম্বর আয়ারল্যান্ডের সাথে। সাভারে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচটিতে বাংলাদেশের মেয়েরা ৮২ রানে জয়লাভ করে। ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রাপ্তির প্রায় দশ বছর পর ২০২১ সালের ১লা এপ্রিল ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল।

প্রমীলা ক্রিকেটের বড় সাফল্য; এশিয়া কাপ জয়

বাংলাদেশের মেয়েরা ২০০৮ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করে আসছে। শুরুতে ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলা হলেও ২০১২ সাল থেকে টুয়েন্টি২০ ফরম্যাটে মেয়েদের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ছেলেরা তিনবার ফাইনাল খেলেও যে কাজটি করতে পারে নি মেয়েরা তা করে দেখিয়েছে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে। ফাইনালে শক্তিশালী ইন্ডিয়াকে তিন উইকেটে হারিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব দখল করো নেয় বাঘিনীরা! মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে টান টান উত্তেজনার ফাইনাল ম্যাচে ২০ ওভারে ইন্ডিয়ার দেয়া ১১৩ রানের টার্গেট ছুতে বাংলাদেশকে শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। খাদিজা ও রুমানার ২টি করে উইকেট এবং নিগার সুলতানার ২৭ ও রুমানা আহমেদের ২৩ রান দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করে।

নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মেয়েদের ওডিআই বিশ্বকাপের দশম আসরে প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় বাংলাদেশের মেয়েরা। ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা ৮টি দল নিয়ে রাউন্ড-রবিন লীগ পদ্ধতিতে টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারানোর মাধ্যমে বিশ্বকাপে তাদের প্রথম জয়ের দেখা পায়। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ফারজানা হকের ৭১ রানের সুবাদে ২৩৪ রান করে। জবাবে পাকিস্তান ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান করে। বাংলাদেশ ৯ রানে ম্যাচ জিতে নেয়। বাংলাদেশের পক্ষে ফাহিমা খাতুন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট দখল করে। টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলো বাংলাদেশ হেরে যায়।

মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথমবার অংশগ্রহণ করে ২০১৪ সালে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৬ বার টি২০ বিশ্বকাপ খেললেও প্রতিবারই প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হয় কোনো ম্যাচ না জিতেই। বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশ থেকে সরে আরব আমিরাতে চলে যায়। এই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের মেয়েরা স্কটল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়ে টি২০ বিশ্বকাপে তাদের প্রথম জয়ের দেখা পায়। 

বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের মেয়েরা খুবই ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করছে। ২০২৩ সালের জুলাইতে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে শক্তিশালী ভারতের সাথে ১-১ ম্যাচে সিরিজ ড্র করেছে মেয়েরা। এই সিরিজেই বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে  প্রথম (১০৭) সেঞ্চুরি করেন ফারজানা হক। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে পাকিস্তানের সাথে ঘরের মাঠে ওডিআই সিরিজ ও টুয়েন্টি২০ সিরিজ জিতে বাঘিনীরা!

এখন পর্যন্ত মেয়েরা ৬৬ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১৭ ম্যাচে জয় পেয়েছে। আর ১২৬ টি টি-২০ ম্যাচ খেলে ৪৬ টি ম্যাচে জয়লাভ করেছে। মেয়েরা এখনো তাদের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি খেলার অপেক্ষায় রয়েছে।

পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিলে এবং সঠিক ক্রিকেট অবকাঠামো প্রস্তুত করতে পারলে আগামীতে মেয়েরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় সাফল্য বয়ে আনতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ