Header Ads Widget

Ticker

6/recent/ticker-posts

আইপিএল খেলার সৌভাগ্য হয়েছে কোন কোন বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের?

আইপিএলে বাংলাদেশি খেলোয়ার

প্রতি বছর মহা-সমারোহে আয়োজন করা হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বা আইপিএল। এ বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে টুর্নামেন্টটির ১৭তম আসর। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ও ধনী এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের নামিদামি খেলোয়াররা অংশগ্রহণ করে থাকে। অর্থনৈতিক বিবেচনায় আইপিএলে খেলতে পারাটা যে কোনো ক্রিকেটারের জন্য স্বপ্নের মঞ্চ। এমনকি অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মত ধনী দেশের ক্রিকেটাররাও আইপিএলে নাম লেখানোর জন্য মুখিয়ে থাকে। প্রতি বছর ভারত ছাড়াও বিদেশের শত শত ক্রিকেটার প্লেয়ার ড্রাফটে নাম জমা দিয়ে থাকেন। আইপিএলের নিলাম এতটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যে, ফর্মে থাকা অনেক নামিদামি প্লেয়াররাও অনেক সময় দল পায় না

২০২৪ সালের আইপিএলে বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজন প্লেয়ার ড্রাফটে নাম জমা দিলেও নিলামের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন পান শুধু মাত্র তিন পেসার; মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম এবং তাসকিন আহমেদ। তবে বিসিবি অনাপত্তি পত্র না দেয়ায় আইপিএল থেকে নাম উঠিয়ে নেন তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। নিলামে থেকে যান শুধু মাত্র মুস্তাফিজুর রহমান। ভিত্তিমূল্য দুই কোটি রুপিতে তাকে দলে ভিড়িয়েছেন চেন্নাই সুপার কিংস। ইতিমধ্যে দলের হয়ে টুর্নামেন্টের প্রথম তিনটি ম্যাচ খেলে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। তিন ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক তিনি, দখল নিয়েছেন পার্পল ক্যাপের! সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহককে পার্পল ক্যাপ দেয়া হয় যেটা প্রত্যেক ম্যাচ শেষে আপডেট করা হয়।

আইপিএলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান মোটামুটি পরিচিত ও নিয়মিত মুখ। দুজনে বেশ কয়েকটি আসরে বিভিন্ন দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এই দুজনের  বাইরে বাংলাদেশিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর কেউ নেই যে কিনা নিয়মিত আইপিএলে খেলেছে! তবে কমপক্ষে একবার করে দল পেয়েছে এবং একটি করে ম্যাচ খেলেছে এই তালিকায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছে।

আইপিএল খেলা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নামের তালিকা:

আব্দুর রাজ্জাক: প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আইপিএল খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল বামহাতি লেগ স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের। ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরে ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে তাকে দলে ভিড়িয়েছিল রয়্যাল চ্যালেন্জার্স বেঙ্গালুর। পুরো টুর্নামেন্টে শুধু মাত্র একটি ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়েছিল রাজ্জাকের। রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচে ২ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়েছিলেন তিনি। এরপর আর কোনো ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি তার।

মোহাম্মদ আশরাফুল: বাংলাদেশের ব্যাটিং বিস্ময় টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ আশরাফুল আইপিএলে এক আসরের জন্য দল পেয়েছিলেন। ২০০৯ সালে আইপিএলের দ্বিতীয় আসরে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলারে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। দিল্লি ডেয়ার ডেভিলসের বিপক্ষে একমাত্র ম্যাচে ১০ বলে ২ রান করার পর টুর্নামেন্টে আর কোন ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি তার।

মাশরাফি মোর্তজা: আইপিএলে বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ক্রিকেটারের নাম মাশরাফি বিন মোর্তজা। ২০০৯ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স ৬ লাখ ডলারের বিনিময়ে দলে নিয়েছিলেন তাকে। তবে মাশরাফির আইপিল অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি। একমাত্র ম্যাচে হায়দ্রাবাদ ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৫৮ রান দেয়ার পর আর কোন ম্যাচে তাকে মাঠে নামার  সুযোগ দেয়া হয়নি।

তামিম ইকবাল: ২০১২ সালে পুনে ওরিয়রর্স ৫০ হাজার ডলারে তামিম ইকবালকে দলে নিলেও একটি ম্যাচও খেলার সৌভাগ্য হয়নি তার। পরের বছর একই টিমে রিটেইন থাকলেও সেবারও পুরো টুর্নামেন্টে সাইড বেঞ্চেই বসে থাকতে হয়েছিল তামিম ইকবালকে!

লিটন দাস: ২০২৩ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স ৫০ লাখ রুপিতে লিটন দাসকে দলে নিয়েছিল।বেশ কয়েক ম্যাচ বসে থাকার পর দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে আইপিএল অভিষেক ম্যাচে ৪ রান করে আউট হন লিটন। কিপিংয়েও বাজে পারফর্মেন্স করায় এক ম্যাচ খেলেই আবারো একাদশে সুযোগ হারাতে হয় তাকে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে পরিবারের প্রয়োজনে বাংলাদেশে আসর পর আর আইপিএলে যোগ দেননি তিনি।

সাকিব আল হাসান: আইপিএল শিরোপা জয়ী প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটারের নাম সাকিব আল হাসান।  ২০১২ ও ২০১৪ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। ২০১১ সালে কলকাতার হয়ে প্রথমবার আইপিএল খেলার সুযোগ পান সাকিব। সেবার ১ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে তাকে দলে নিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। কলকাতার হয়ে ৭টি আসরে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়েও ২টি আসরে খেলার সুযোগ পেয়েছেন সাকিব। আইপিএলের ৯টি আসরে ৭১টি ম্যাচ খেলে ৫২ ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ২৯.৮২ গড়ে ৭৯৩ রান করেছেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা ২টি; সর্বোচ্চ রান ৬৬। অপরদিকে ২৪৭.২ ওভার বোলিং করে ২৯.১৯ গড় ও ৭.৪৪ ইকোনোমিতে ৬৩ উইকেট সংগ্রহ করেছেন। ৩ উইকেট পেয়েছেন দুইবার; সেরা বোলিং ফিগার  ৩/১৭।

মুস্তাফিজুর রহমান: ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে প্রথমবার আইপিএল খেলেই শিরোপার দেখা পেয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। পুরো টুর্নামেন্টে ১৭ উইকেট নিয়ে দলের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি পেয়েছেন সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার। আইপিএলে ফিজ নামে পরিচিত মুস্তাফিজ ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সবগুলো আইপিএলে অংশগ্রহণ করেছেন; খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, দিল্লি ক্যাপিটালস, রাজস্থান রয়্যালস ও চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। আইপিএলে মোট ৫১টি ম্যাচ খেলে ২৮.৭০ গড় এবং ৭.৯৯ ইকোনোমিতে ৫৪টি উইকেট সংগ্রহ করেছেন মুস্তাফিজ। সেরা বোলিং ফিগার ৪/২৯।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ