সিরিজ বাচানোর ম্যাচে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্যে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার দেয়া ১৬৬ রানের লক্ষ্য পেরুতে খেলতে হয়েছে মাত্র ১৮.১ ওভার। অর্ধযুগ পর শ্রীলঙ্কাকে টি২০তে হারালো বাংলাদেশ। টাইগাররা শ্রীলঙ্কার সাথে শেষ টি২০ ম্যাচটি জিতেছিলো ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে।
সিরিজে টিকে থাকতে বাংলাদেশের কাল ম্যাচ জয়ের বিকল্প ছিল না। প্রথম ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ-জাকের আলির চমৎকার ব্যাটিংয়ের পরও ম্যাচটি ৩ রানে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কালও টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানায় বাংলাদেশ। মেইডেন ওভার দিয়ে শুরু করা শরিফুল শুরুর দিকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে শ্রীলঙ্কাকে চাপে রাখেন। দ্বিতীয় ওভারে তাসকিনের বলে ০ রানে আউট হয় আভিশকা ফার্নান্দো। এরপর দুই মেন্ডিজ মিলে ৬৬ রানের পার্টনারশীপ গড়ে তুলে বড় সংগ্রহের বার্তা দিচ্ছিলেন। ইনিংসের নবম ওভারে ওকেশনাল বোলার সৌম্য সরকারের বলে কট বিহাইন্ড হন কুশল মেন্ডিজ। কুশলের আউটের পরই ছন্দপতন হয় শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে; পরতে থাকে নিয়মিত উইকেট। সৌম্য, মুস্তাফিজ, তাসকিন ও মেহেদী সবাই একটি করে উইকেট তুলে নেন। শরিফুল ও রিশাদ উইকেট না পেলেও দারুন ইকোনমিতে বোলিং করে শ্রীলঙ্কার রান আটকিয়ে রাখার কাজটা করেন। শেষ উইকেট জুটিতে সানাকা ও ম্যাথিউসের ৩৭ বলে ৫৩ রানের পার্টনারশীপের সুবাদে স্কোরবোর্ডে ১৬৬ রান জমা করতে সক্ষম হয় শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার পক্ষে কুশল মেন্ডিজ ৩৬, কামিন্দু মেন্ডিজ ৩৭, আসালাঙ্কা ২৮, ম্যাথিউস ৩২ ও শানাকা ২০ রান সংগ্রহ করেন।
১৬৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে লিটন দাস ও সৌম্য সরকার দলকে দারুন সুচনা এনে দেন। দুজন মিলে ৬.৫ ওভারে সংগ্রহ করেন ৬৮ রান। লিটন সাভাবিক ছন্দে ব্যাট করে ২৪ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কার সাহাজ্যে ৩৬ রান করে আউট হন। অপর দিকে সৌম্যর ২২ বলে ২৪ রানের ইনিংসে মাঝে মাঝেই ছন্দপতন হয়েছে। একবার কট বিহাইন্ড হয়ে থার্ড আম্পায়ের রিপ্লেতে জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন তিনি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে বিনুরা ফার্নান্দোর বলে কট বিহাইন্ডের আবেদনে সৌম্যকে আউট দেন ফিল্ড আম্পায়ার। সেই আউট নিয়ে কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয়। টিভি রিপ্লেতে আলট্রা এজ স্পাইক দেখা গেলেও ব্যাট আর বলের যথেষ্ট দুরত্ব থাকায় আম্পায়ার ডিসিশন চেঞ্জ করে নটআউট সিগন্যাল দেন। এ নিয়ে শ্রীলঙ্কার প্লেয়ারদের মধ্যে কিছুটা অসন্তুষ্টি দেখা যায়। আম্পায়ারের সাথে কিছুটা তর্ক-বিতর্কও হয়।
লিটন-সৌম্য বিদায়ের পর শান্ত-তৌহিদরা আর কোন বিপর্য়য় হতে দেননি। দুজনে মিলে ৫৫ বলে ৮৭ রানের পার্টনারশীপ করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। বিপিএল থেকে দারুন ফর্মে থাকা তৌহিদ হৃদয় ২৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ রান করেন। অপরদিকে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নাজমুল হোসেন শান্ত অনেকদিন পর টি২০তে নিজেকে খুজে পেলেন। ২০২৩ সালের মার্চ মাসের পর থেকে আন্তর্জাতিক টি২০তে রান খড়ায় ভুগতে থাকা শান্ত ৩৮ বলে ৫৩ রান করে দলের জয়ে মুল ভুমিকা পালন করেন। মেরেছেন ৪টি চার ও ২টি ছক্কা। ওয়ানডে আর টেস্টে নিয়মিত রান পেলেও টি২০তে রান খড়া যাচ্ছিল টাইগার ক্যাপ্টেনের। শেষ ৮টি আন্তর্জাতিক টি২০তে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন ২০ রানের। বিপিএলেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি তিনি। সমালোচকদের তীর ছিল তার দিকে। অবশেষে রানের ধারায় ফিরে নিজের জন্য ও দলের জন্য স্বস্তি বয়ে নিয়ে এলেন তিনি।
সিলেটের পিচে ১৬০/১৭০ রান যে তেমন কঠিন কিছু না সেটা আগেই বুঝেছিল উভয় দল। প্রথম ম্যাচে ২০৬ রান করেও ম্যাচ হারতে বসেছিলো শ্রীলঙ্কা! কাল ম্যাচ শেষে সাক্ষাৎকারে ২০/৩০ রান কম হওয়ার আক্ষেপের কথাই বললেন শ্রীলঙ্কান ক্যাপ্টেন। তবে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৫ রানে আটকিয়ে রাখার কৃতিত্বটা বাংলাদেশের বোলারদেরই দিতে হবে। উভয় দলের একটি করে ম্যাচ জয়ের ফলে আগামী ৯ই মার্চ শেষ টি২০ ম্যাচটি অঘোষিত ফাইনালে রুপ নিয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ