ফাইনালে একটা জমজমাট ম্যাচের প্রত্যাশা থাকলেও অনেকটা একতরফাভাবে ম্যাচটা জিতে নেয় অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গড়া বরিশাল। ফাইনালে কুমিল্লার করা ১৫৪ রান যে জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না সেটাই প্রমাণ করলো তামিম, মিরাজ, মায়ার্সরা। এক ওভার ও ৬ উইকেট হাতে রেখে সহজেই ম্যাচটি জিতে নিয়েছে বরিশাল।
পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ ব্যাটিং করা কুমিল্লার লিটন দাস, তৌহিদ হৃদয়রা ফাইনালে ব্যর্থ হয় নিজেদের মেলে ধরতে। ব্যর্থ হয়েছেন জনসন চার্লস, সুনীল নারাইন, মঈন আলীরাও। একসময় ১২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে কুমিল্লার রান দাঁড়ায় মাত্র ৭৯। তাইজুল, মায়ার্স ও ম্যাকয় নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে কুমিল্লার রানরেট আটকিয়ে রাখার কাজটা করেন। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাহিদুল ইসলাম ও জাকের আলি ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৯ রান যোগ করলেও রান রেটের অবস্থা তখন খুবই খারাপ! মাহিদুল ৩৮ রান করতে ৩৫ বল আর জাকের আলি ২০ রান করতে ২৩ বল খরচ করে ফেলেন। ইনিংসের যখন মাত্র ২০ বল বাকি তখন কুমিল্লার শেষ ভরসা আন্দ্রে রাসেল ক্রিজে এসে ৪টি ছক্কার সাহায্যে ১৪ বলে ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দর্শক-সমর্থকদের মনে কিছুটা আশা সঞ্চার করেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল কুমিল্লার রান ১৬০/১৭০ পার হয়ে যাবে কিন্তু শেষ দিকে সাইফুদ্দিনের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণে ১৫৪ রানেই কুমিল্লার ইনিংস শেষ হয়ে যায়।
১৫৫ রানের টার্গেটে চমৎকার সূচনা করেন তামিম ইকবাল ও মেহেদী মিরাজ। উদ্বোধনী জুটিতে ৮ ওভারে তারা দুজন সংগ্রহ করেন ৭৫ রান। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল
২৬ বলে ৩৯ এবং মেহেদী মিরাজ ২৬ বলে ২৯ রান করে আউট হওয়ার পর দারুণ ফর্মে থাকা কাইল মায়ার্স ও মুসফিকুর রহিম ৫৯ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান। মায়ার্স ৩০ বলে ৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। মুসফিকুর ১৮ বলে ১৩ রান করে তাকে যোগ্য সমর্থন দেন। শেষদিকে মাহমুদুল্লাহ ও ডেভিড মিলার ক্রিজে থেকে বরিশালের জয় নিশ্চিত করেন। এই জয়ের ফলে বিপিএলে যুক্ত হলো নতুন চ্যাম্পিয়নের নাম। তিনবার ফাইনাল খেলার পরও শিরোপা জিততে না পারা বরিশাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে ভাসলো তামিম, মুসফিক, মাহমুদুল্লাহ, মায়ার্সদের মাধ্যমে।
পরিসংখ্যানে বিপিএল-২০২৪:
সর্বোচ্চ রানঃ ৪৯২, তামিম ইকবার (বরিশাল)সর্বোচ্চ উইকেটঃ ২২, শরিফুল ইসলাম (ঢাকা)
সবচেয়ে বেশি ছক্কাঃ ২৪, তৌহিদ হৃদয় (কুমিল্লা)
সেরা বোলিংঃ ৫/১২, আবু হায়দার রনি (রংপুর)
এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কাঃ ১০, উইল জ্যাকস (কুমিল্লা)
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসঃ ১১৬, তানজিদ তামিম (চট্টগ্রাম)
সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংসঃ ২৩৯/৩, কুমিল্লা
দলীয় সর্বাধিক রানঃ ২৪৩৫, বরিশাল (১৪ ম্যাচ)
সেঞ্চুরিঃ ৩টি, ১১৬,তানজিদ তামিম (চট্টগ্রাম), ১০৮, তৌহিদ হৃদয় (কুমিল্লা), ১০৮, উইল জ্যাকস (কুমিল্লা)
সর্বাধিক ক্যাচঃ ১৭, মুসফিকুর রহিম (বরিশাল)
এই বছর বিপিএলে প্রাইজমানি কত হবে সেটা জানতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। টুর্নামেন্টের শেষ দিকে এসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের পরিমাণ ঘোষণা করা হয়েছে। গতবারের মত এবারও চ্যাম্পিয়ন দলকে ২ কোটি এবং রানার্সআপ দলকে ১ কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয় বিসিবি। অন্যান্য দেশের টি-২০ লীগগুলোর পুরস্কারের তুলনায় যা খুবই সামান্য। প্রাইজমানির পরিমাণ নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদেরও। বিশ্বের পঞ্চম ধনী ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে পুরস্কারের পরিমাণ আরো বেশি প্রত্যাশা করাটাই স্বাভাবিক। আইপিএল, বিগ ব্যাশের সাথে তুলনা বাদই থাক; পাকিস্তানের পিসিএল ও আরব আমিরাতের আইএল টি-২০ লীগেও বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি প্রাইজমানি প্রদান করা হয়। পাকিস্তান টুর্নামেন্টে মোট ৩৮ কোটি টাকা এবং আরব আমিরাত ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দিয়ে থাকে।
বিপিএল-২০২৪ পুরস্কারের তালিকা ও পরিমাণ:
চ্যাম্পিয়ন- ২ কোটি, ফরচুন বরিশাল।
রানার্সআপ- ১ কোটি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
প্লেয়ার অফ দ্যা টুর্নামেন্ট- ১০ লাখ, তামিম ইকবাল।
প্লেয়ার অফ দ্যা ফাইনাল- ৫ লাখ, কাইল মায়ার্স।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক- ৫ লাখ, তামিম ইকবাল।
সর্বাধিক উইকেট শিকারি- ৫ লাখ, শরিফুল ইসলাম।
বেস্ট ফিল্ডার অফ দ্যা টুর্নামেন্ট- ৩ লাখ, নাঈম শেখ।
0 মন্তব্যসমূহ